সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইতিবাচক মনোভাব কাম্য

জাফর আহমাদ:

ইসলাম নেতিবাচক মনোভাব থেকে ইতিবাচক মনোভাবকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। ইতিবাচক ভালো, নেতিবাচক খারাপ। ইতিবাচক পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য উপকারী। ইতিবাচক জীবনকে সুন্দর ও সাবলীল করে। ইতিবাচক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও মহামানবদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল, এটি নবীদের গুণবিশেষ। এই গুণ দিয়ে তারা পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন। যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা পেতে হলে ইতিবাচক মনোভাবকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

দৈনন্দিন বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের কেউ কেউ পরিচিত, অতিপরিচিত আত্মীয়, বন্ধু ও সহকর্মী। আবার অপরিচিত জীবনের বিভিন্ন বাঁকে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। তাদের কেউ কেউ সদা হাস্যোজ্জ্বল, চারদিকে আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে, অল্প সময়ে আপন করে নিচ্ছে, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিচ্ছে, আশার বাণী শোনাচ্ছে; আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষণœ, রাশভারী, আপনাকে বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে, কুরুচিপূর্ণ কথা বলতেও দ্বিধা করছে না। হ্যাঁ থেকে না, না এর উচ্চারণ বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ যারা নেতিবাচক ভাব প্রকাশ করে।

আমরা গভীরভাবে যদি লক্ষ করি তাহলে দেখব, জীবন চলার পথে হারাম তথা নেতিবাচক একেবারেই নগণ্য ও নির্ধারিত। পক্ষান্তরে হালাল তথা ইতিবাচক অসংখ্য ও অনির্ধারিত। এই নির্দিষ্ট কিছু হারাম বাদ দিলে মানুষের জীবনে ‘ইতিবাচকতায়’ ভরপুর। সুতরাং একজন মুসলমানের মন ও মননে সদা ইতিবাচক চিন্তা ঘুরপাক খাবে এটিই কাম্য। তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন ও আচার-আচরণে সদা-সর্বদা ইতিবাচকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন চরিত্রে এই গুণটি প্রবলাকারে পরিলক্ষিত হয়। পাহাড়সম সমস্যার সমাধানেও তিনি কখনো নেতিবাচক পন্থার আশ্রয় নিয়েছেন, এমনটি কদাচিৎ পরিলক্ষিত হয়। অন্যথায় ইতিবাচক চিন্তাচেতনা দিয়েই তিনি সবকিছু সমাধান করেছেন।

মাত্র ২৩ বছরে অন্ধকার যুগ পেরিয়ে একটি জাতিকে মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যান রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিবাচক কর্মপদ্ধতি ও কর্মপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে। তিনি তৎকালীন অধঃপতিত সমাজকে ধ্বংসের প্রান্তসীমানা থেকে উদ্ধারের নিমিত্তে ইতিবাচক দিক তথা ন্যায়নীতি বিকাশের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এজন্য সর্বপ্রথম তিনি মানুষের মন-মননে ‘আল্লাহ ও আখেরাতের ভয়’ জাগ্রত করার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি নেতিবাচক তথা উদ্যতভাব, খড়গহস্ত ও কর্কশভাষী হননি; বরং তার মনের সবটুকু দরদ ঢেলে দিয়ে, একান্ত অকৃত্রিম হিতাকাক্সক্ষী সেজে ও অত্যন্ত কোমলভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন। যার স্বীকৃতি স্বয়ং আল্লাহতায়ালা এভাবে দিয়েছেন, ‘আপনি যে কোমল হৃদয় হতে পেরেছেন, সে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহেরই ফল। কিন্তু আপনি যদি কঠিন হৃদয় ও কর্কশভাষী হতেন তাহলে তারা সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে যেত।’ সুরা আলে ইমরান : ১৬

আল্লাহর পক্ষ থেকেও এ কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছিল। তার প্রিয় রাসুল (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ প্রথম প্রথম অহির বেশির ভাগই ছিল ‘আল্লাহ ও আখেরাতের ভয়’ সংবলিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কি জীবনের আয়াতগুলো তার বাস্তব প্রমাণ। এসব ফরমানের আলোকে তিনি বিশ্ববাসীকে নৈতিকতা ও মানবতার চতুঃসীমার মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দকে ভালো পন্থায় প্রতিরোধ করো। তখন দেখবে, তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।’

বর্ণিত আয়াতে মন্দকে ভালো পন্থায় তথা ইতিবাচক পন্থায় সমাধানের কথা বলা হয়েছে। নেতিবাচককে নেতিবাচক পন্থায় সমাধানের কথা বলা হয়নি। তাই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষদের প্রথমত তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহ্বান জানাতেন। কোরআন মাজিদে অঙ্কিত আখেরাতের ভয়াবহ দৃশ্য উপস্থাপন করতেন। পাশাপাশি চুরি, ব্যভিচার, সন্তান হত্যা, মিথ্যা বলা, রাহাজানি করা, আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফেরানো প্রভৃতি কাজ থেকে বিরত রাখা ও তাদের মনে ঘৃণা জন্মানোর চেষ্টা করেন। তার লক্ষ্য ছিল আত্মার পবিত্রতা সাধন, মন মানসে মলিনতা, শোষণ এবং জৈবিক ও পাশবিক পঙ্কিলতাসংকুল প্রক্ষালন করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদাকে পুনরুদ্ধার করা। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রথমেই তিনি তরবারির কাছে নয়; বরং হেদায়াতের আলোর প্রয়োজনীয়তাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। হাত, পা ও মাথাকে নত করার আগে মানুষের মনের ব্যাকুলতার প্রয়োজনীয়তার অনুভব করেছেন। শারীরিক বশ্যতার আগে আত্মার আনুগত্যশীলতাকে উজ্জীবিত করেছেন। কারণ আল্লাহর ভয় যার মনকে বিচলিত করে না, মানুষের ভয় তাকে কীভাবে বিচলিত করবে?

ইতিবাচক ও নেতিবাচক মনোভাব মানুষের সার্বিক জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ইতিবাচক মনোভাব মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবনের সবস্তরে ইতিবাচক ফল দিতে থাকে। এ জাতীয় ব্যক্তিরা সাধারণত কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়। কোমল হৃদয় আল্লাহর এক বিশেষ দান। কোমল হৃদয়, কোমল মনের অধিকারী ব্যক্তিরা সামাজিকভাবে সম্মানের পাত্র হিসেবে পরিগণিত হন। এটি এমন একটি দুর্লভ গুণ, যার প্রভাবে ব্যক্তির চরিত্রে আরও কতগুলো সুন্দর ও বিরল গুণ এবং বৈশিষ্ট্যের সমাহার ঘটে। যেমন যিনি কোমল হৃদয়ের অধিকারী, নম্র-ভদ্র, মিষ্টভাষী, সুন্দর ব্যবহার, মানবিক আচরণ, পরশ্রীপরায়ণ, কল্যাণকামী, সহানুভূতিশীল, দয়ার্দ্র, নির্লোভী, নিরহংকারী ও নিঃস্বার্থবাদী স্বভাবের হয়ে থাকেন। এ ধরনের ব্যক্তিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের যেখানেই বসানো হবে, সেখানকার পরিবেশ যেমন বদলে যাবে, তেমনি সার্বিক উন্নতি প্রসার লাভ করবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION